

ডেস্ক রিপোর্টঃ
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ এবং ‘শপথ ভঙ্গের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল, যিনি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ নজরুল বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং শপথ ভঙ্গের শামিল। কারণ, ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানকে সঙ্গে নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এরপর রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পরামর্শ চাওয়া হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা উচিত। প্রধান বিচারপতিসহ বিচারপতিরা এ বিষয়ে মতামত দেন, যার প্রথম লাইন ছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী যেহেতু পদত্যাগ করেছেন...।’ এরপর সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে মন্ত্রণালয় একটি নোট রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়, যা তিনি গ্রহণ করেন এবং তার ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেন।’’
আসিফ নজরুলের মতে, ৫ আগস্টের ভাষণ এবং এর পরবর্তী কার্যক্রম প্রমাণ করে যে শেখ হাসিনা সত্যিই পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন প্রায় আড়াই মাস পর রাষ্ট্রপতি যদি বলেন, তিনি পদত্যাগপত্র পাননি, তবে এটি স্ববিরোধী বক্তব্য এবং শপথ ভঙ্গের শামিল। এতে তার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সংবিধানে বলা আছে, যদি রাষ্ট্রপতির শারীরিক বা মানসিক সক্ষমতা না থাকে কিংবা তিনি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তবে তার পদে থাকার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’’
আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির এমন স্ববিরোধী কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। তিনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন, তবে উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হবে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
শনিবার (১৯ অক্টোবর) মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’-এ সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেন।
‘‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না...’’ শিরোনামে প্রকাশিত লেখায় মতিউর রহমান উল্লেখ করেন, তিনি শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে তিন সপ্তাহ অনুসন্ধান চালান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখেন, সেখানে কোনো পদত্যাগপত্র জমা নেই। পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন।
সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতির কাছে জানতে চাইলে, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে আছে কি না, জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পাইনি। হয়তো তিনি সময় পাননি।’’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘‘৫ আগস্ট সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে ফোন আসে, বলা হয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে এসে সাক্ষাৎ করবেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই জানানো হয়, তিনি আসবেন না।’’
তিনি বলেন, ‘‘সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান যখন বঙ্গভবনে এলেন, তখন আমি তার কাছে জানতে চাই, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন কি না। কিন্তু তিনিও বলেন, শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদত্যাগপত্রের কপি সংগ্রহ করতে আসেন। তখন আমি তাকে বলি, আমিও এটি খুঁজে পাইনি।’’
এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ঘিরে জটিলতা ও বিতর্ক এখনো অব্যাহত রয়েছে।
মন্তব্য করুন


অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত এই আদেশ দেন।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ আসামিকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ এ তথ্য নিশ্চিত করেন৷ তিনি বলেন, আসামির তিনদিনের রিমান্ড আবেদন ছিল। তবে এই কোর্টের রিমান্ড বিষয়ে শুনানি করার এখতিয়ার না থাকায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সিনিয়র আদালতে এই রিমান্ড বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডির ৩ নম্বর সড়ক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
এর আগে এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান এবং অধ্যাপক আবুল বারাকাতসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো নাজমুল হোসাইন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ঋণের অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। গভর্নর থাকাকালে আতিউর রহমান ও আবুল বারাকাত পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণ হিসেবে পাইয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে আতিউর রহমান ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন অনৈতিক কৌশল ব্যবহার করে সেই অর্থ আত্মসাৎ করেন।
মন্তব্য করুন


খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘটিত হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে আয়োজিত তারুণ্যের উৎসবে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদিচ্ছার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী শক্তির বাংলাদেশে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, ট্রুথ কমিশন গঠন করে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আপাতত আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। তাদের আগে বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে আদর্শিক ও রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে পাশে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) কুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধের ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পরে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।
মন্তব্য করুন


তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় লেখা থেকে শুরু করে স্বাক্ষর করা পর্যন্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। এর জন্য খায়রুল হকের ৭ বছর সাজা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি নিয়ে ব্রিফিংকালে এমনটা জানান তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই রায় লেখা থেকে শুরু করে স্বাক্ষর করা পর্যন্ত আইনি পরিক্রমায় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক যে অপরাধ করেছেন, সে অপরাধ দণ্ডবিধির ২১৯ ধারায় একটি সুনির্দিষ্ট অপরাধ। এর জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের সাজা হতে পারে।
তিনি বলেন, উনি (খায়রুল হক) জানতেন একটা জাজমেন্ট প্রনাউন্সম্যান্টের পর সেই জাজমেন্ট একমাত্র রিভিউ ফোরামে পরিবর্তন করা যাবে। এরপরও ক্ষমতা না থাকলেও রায় বদলেছেন, এটা অপরাধ। আমরা এটা আদালতের নজরে আনবো।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খায়রুল হকের দেয়া রায় বাতিল হলে দেশের গণতন্ত্র সুসংহত করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হবে। আপিলে আমাদের প্রার্থনা থাকবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে যে রায় হয়েছে, সেই রায় বাতিল করে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের দ্বার উন্মোচন করে দেয়া।
এর আগে বুধবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে আগামী ২১ অক্টোবর এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। দুপুরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই দিন ধার্য করেন।
তারও আগে সকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে দ্বিতীয় দিনের রিভিউ শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিয়ে সাময়িক সমাধান দিতে চায় না আপিল বিভাগ। এ নিয়ে কার্যকর সমাধান চায়, যাতে এটা বার বার বিঘ্নিত না হয়। এ সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন যদি তত্ত্বাবধায়ক ফিরিয়ে দেই তবে এটি কবে থেকে কার্যকর হবে?
অন্যদিকে শুনানিতে রায়ের পর কীভাবে কার্যকর হবে, সে বিষয়ে আপিল বিভাগ জানতে চাইলে নতুন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণ দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে রিভিউ শুনানিতে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠলে, এর উত্তর দিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে অনুরোধ করেন প্রধান বিচারপতি।
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গেল দেড় দশকে দেশের মানুষ শাসিতের পরিবর্তে শোষিত হয়েছে নানাভাবে। মানুষ গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যেসব সিস্টেম ছিল সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে এবং মানুষ বিচার পায়নি। যার কারণে এই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। আর সেই রাজপথ থেকেই নির্ধারিত হয়েছে কে প্রধান বিচারপতি হবেন আর কে সরকার প্রধান হবেন। জনগণের এই ক্ষমতাকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই। এসব অবজ্ঞা করলেই বিপ্লবের সৃষ্টি হয়। এ সময় ’৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন।
পরবর্তীতে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। এরপর ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এদিকে গত ১৭ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।
মন্তব্য করুন


ডেস্ক রিপোর্টঃ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তরুণরা সংখ্যায় বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপ-২০২৪ এর উদ্বোধনী ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি এই ভাষণ দেন।
সংস্কারের বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এ জন্য সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠন করা হয়েছে। যেমন ধরুন-কোন বয়সে একজন নাগরিক ভোটার হতে পারবে তার জন্য নানা দেশে নানা বয়স নির্ধারণ করা আছে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন নিশ্চয়ই এরকম একটা বয়স সুপারিশ করবে। সে বয়স আমার পছন্দ হতেও পারে না-ও হতে পারে। ধরুন আমি তরুণদের তাড়াতাড়ি ভোটার করার পক্ষে। যে যত তরুণ, পরিবর্তনের প্রতি তার আগ্রহ তত বেশি—এই হলো আমার যুক্তি। তরুণরা তাকে শক্তি যোগায়। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তার গভীর সখ্যতা তাকে এই শক্তি যোগায়। তরুণরা সংখ্যায়ও বেশি। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা আগ্রহী। নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে তার মতামত নেওয়ার জন্য আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন কি ধরনের সুপারিশ করবেন তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে ঐক্যমতে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কারের যে মহান দায়িত্ব ঐতিহাসিক কারণে আমাদের কাছে এসে গেছে এই দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি রাজনৈতিক দল, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যেককে দৃঢ়তার সঙ্গে সংস্কারের এই মহাযজ্ঞে আনন্দের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল বাংলাদেশকে মুক্ত করেনি, আমাদের স্বপ্নকেও তুমুল সাহসী করে তুলেছে। বাকহীন বাংলাদেশ জোরালো কণ্ঠে আবার কথা বলার শক্তি ফিরে পেয়েছে। এই দৃঢ় কণ্ঠ ঐক্য গঠনে সোচ্চার হয়েছে। ঐক্য আমাদের মূল শক্তি।
জুলাই অভ্যুত্থান আমাদেরকে ঐতিহাসিক মাত্রায় বলিয়ান করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত পাঁচ মাসে এই ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধ শক্তি আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করার ক্রমাগত প্রয়াস চালাতে থাকায় আমাদের ঐক্য আরও মজবুত হচ্ছে। এই ঐক্যের জোরেই এখন আমরা অসাধ্য সাধন করতে পারি। এখনই আমাদের সর্বোচ্চ সুযোগ। এমন অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যেটা সকল নাগরিকের জন্য সম্পদের ও সুযোগের বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
তিনি বলেন, যত নিম্ন আয়ের পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন- প্রতিটি নাগরিকের, তিনি নারী হোক, আর পুরুষই হোক তিনি যেন বিনা বাধায় তো বটেই বরং রাষ্ট্রের আয়োজনে তার সৃজনশীলতা প্রকাশ করে যে কোনো পর্যায়ের উদ্যোক্তা হতে পারেন বা তিনি যে ধরনের কর্মজীবন চান তাই বেছে নিতে পারবেন। এমন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এই পরিচিতি অবান্তর হয়ে পড়বে। সবার একটিই পরিচয়-আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সকল অধিকার প্রদান করতে বাধ্য।
ড.ইউনূস আরও বলেন, রাষ্ট্রের কাছে এবং অন্য নাগরিকের কাছে আমার আর কোনো পরিচয় দেবার প্রয়োজন হবে না। যেখানে ব্যক্তি বন্দনার কোনো সুযোগ থাকবে না। দেশের ভেতরে বা বাইরে প্রভু-ভৃত্যের কোনো সম্পর্কের সুযোগ থাকবে না। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার সুবাদে হবো বিশ্ব নাগরিক। দেশের মঙ্গল সাধন করা যেমন হবে আমাদের নাগরিক দায়িত্ব, তেমনি বিশ্বের মঙ্গল সাধন করাও আমাদের কর্তব্য, এ দায়িত্বও আমরা সমানভাবে পালন করব। আমাদের তরুণ-তরুণীরা দ্রুত এই দুই দায়িত্ব সমানভাবে পালন করার জন্য প্রস্তুতি নেবে।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের যোদ্ধাদের স্মরণ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের সকল যোদ্ধাদের। বিশেষ করে অভিবাদন জানাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া ছাত্রজনতাকে। যারা আহত হয়েছেন, চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন, যাদের অঙ্গহানি হয়েছে তাদের প্রতি আমাদের ঋণ শোধ হওয়ার নয়। নতুন বাংলাদেশ গঠনে তাদের প্রেরণা ও অবদান জাতি কখনো ভুলতে পারবে না।’
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের রূপান্তর পর্বে প্রবেশ করার অধিকার অর্জন করেছি। এই রূপান্তর দ্রুত সফলভাবে কার্যকর করার জন্য আমাদেরকে সকল শক্তি নিয়োজিত করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে হবে। পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আমাদের এই কাঙ্ক্ষিত রূপান্তরের লক্ষ্য হবে সকল ধরনের বৈষম্য অবসানের রাজনৈতিক আয়োজন নিশ্চিত করা, এদেশে গণতান্ত্রিক ও নাগরিক সমতা ভিত্তিক একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণ ছাড়া জুলাইয়ের শহীদদের আত্মদান অর্থবহ হতে পারে না।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশকে আদর্শভিত্তিক সকল রকমের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে গভীর অন্ধকারের দিকে আমাদেরকে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার প্রিয় বাংলাদেশকে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের পথে ফেরানোর লক্ষ্যে কাজ করছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন- এই তিন লক্ষ্যের কোনোটিকে ছাড়া কোনোটি সফল হতে পারবে না। ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। পাশাপাশি আমরা ভুলতে পারি না যে, আমাদের ছাত্র-জনতা অটুট সাহসে শিশুহত্যাকারী ও পৈশাচিক ঘাতকদের মোকাবিলা করেছে। মানবতার বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু সংস্কারের কাজে সকল নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে। যারা ভোটার তারা তো অংশগ্রহণ করবেনই, তার সঙ্গে যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবেন তারাও সর্বাত্মকভাবে সংস্কারের কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করুন।
তিনি বলেন, সংস্কারের কাজটা নাগরিকদের জন্য সহজ করতে আমরা ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দিয়েছি। তাদের প্রতিবেদন আমরা জানুয়ারি মাসে পেয়ে যাব। প্রত্যেক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হলো প্রধান বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে তার মধ্য থেকে একটি বিকল্পকে জাতির জন্য সুপারিশ করা। যার যার ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কিভাবে রচিত হবে তা বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে সুপারিশমালা তৈরি করে দেওয়া। এতে নাগরিকদের পক্ষে মতামত স্থির করা অনেকটা সহজ হবে। তবে কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করলেই আমাকে-আপনাকে তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সব ক’টা কমিশন মিলে আমাদের সামনে বহু সুপারিশ তুলে ধরবে। আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে যার যাই মতামত হোক না কেন আমরা দ্রুত একটা ঐক্যমতে পৌঁছে সংস্কারের কাজগুলো করে ফেলতে চাই। নির্বাচনের পথে যেন এগিয়ে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে চাই। আপনাদের আজকের সংলাপ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এমন একটি প্রক্রিয়া তুলে ধরে আমাদের এই দায়িত্বকে সহজ এবং গতিময় করে দেবে আশা করছি।
সংলাপের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
মন্তব্য করুন


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া ৬০ হাজার ৮০২ টন গমবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোমবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুযায়ী নগদ ক্রয় চুক্তি নম্বর জি টু জি-এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই গমবাহী জাহাজটি এসেছে।
চুক্তির আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম আমদানি করা হবে। এর মধ্যে প্রথম চালান হিসেবে ২৫ অক্টোবর ৫৬ হাজার ৯৫৯ টন গম দেশে এসেছে।
জাহাজে থাকা গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নমুনা পরীক্ষার পর দ্রুত খালাসের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন


গতকাল রাত থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবের বাড়িটি ক্রেন দিয়ে ভাঙা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি ভবনের অর্ধেকের বেশি এবং অন্য একটি ভবনের ২০ শতাংশ ভাঙা সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির সামনে হাজার হাজার উৎসুক জনতা জমায়েত হয়েছেন। কেউ কেউ হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভাঙার কাজে অংশ নিচ্ছেন, আবার কেউ কেবল দাঁড়িয়ে দেখছেন। একটি ক্রেন দিয়ে দক্ষিণ পাশের ভবনটি ভাঙার কাজ চলছে।
এ সময় ফয়সাল করীম নামের একজন উৎসুক জনতা বলেন, "এই বাড়িটিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেওয়া হয়নি। আজ এটা ভেঙে ফেলা মূলত জনরোষের বহিঃপ্রকাশ। আমরা চাই এই জায়গায় একটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হোক।"
তার কথার মাঝখানেই অন্য একজন বলেন, "বাড়িটি ভেঙে আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হোক, যাতে তারা এখানে বসবাস করতে পারে।"
এ সময় কেউ কেউ এই জায়গায় মসজিদ নির্মাণের দাবিও তুলেছেন।
গতকাল সন্ধ্যা থেকেই ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে ৩২ নম্বরের এই বাড়িটিতে আসেন এবং ভাঙচুর শুরু করেন। মধ্যরাতে ক্রেন নিয়ে আসা হয় এবং তখন থেকেই বিরতিহীনভাবে ভাঙার কাজ চলছে।
মন্তব্য করুন


আইনি বাধা না থাকলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা, তা কমিশনের সিদ্ধান্তের ব্যাপার নয়। যদি আদালত বা সরকার নিষেধাজ্ঞা না দেয়, তবে দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো বাধা থাকবে না।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি আরও বলেন, ৭২ সাল থেকে আওয়ামী লীগ একটি নিবন্ধিত দল। নির্বাচনে কমিশন এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং কমিশনের ওপর কোনো চাপ নেই। গত নির্বাচনের মতো বহিঃশক্তি নির্বাচন কমিশনে চাপ প্রয়োগ করতে পারবে না।
এছাড়া, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কমিশন সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, "এখন আমরা বিবেকের চাপে আছি। এদেশে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব, খারাপ নির্বাচন করাও সম্ভব।" আগামী ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে, এবং এবার আগের মতো ভোট হবে না। তিনি বলেন, "পাঁচ আগস্টের পর ভোটের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। ৯১ ও ৯৬ সালের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।"
বর্তমান ভোটার তালিকায় ভুয়া ভোটার থাকার বিষয়টি তুলে ধরে সিইসি বলেন, "অনেকেই মারা গেছেন, কিন্তু তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।" তিনি জানান, কেউ মারা গেলে তাদের স্বজনরা ভোটার তালিকা থেকে নাম বাতিল করতে আসেন না, এবং এই সুযোগটি বিগত নির্বাচনে নেওয়া হয়েছিল।
বিগত নির্বাচন কমিশনকে শাস্তির আওতায় আনা হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, "এটি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের বিষয়। আমরা এখনও তাদের সুপারিশনামা পাইনি। তবে আমাদের কমিশনের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো চিন্তা করা হচ্ছে না।"
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। সিইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো তিনি চট্টগ্রামে সফর করেছেন।
মন্তব্য করুন


বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে জুবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ জন নিহত ও প্রায় শতাধিক মুসল্লি আহত হয়েছেন। এদিকে ইজতেমা ময়দান নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করে ভিডিও বক্তব্য দিচ্ছেন সাদপন্থিরা। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোররাত সোয়া ৩টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
নিহতরা হলেন- কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু গ্রামে আমিরুল ইসলাম বাচ্চু (৭০), ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকার বেলাল (৬০), বগুড়ার তাজুল ইসলাম (৭০)।
আহতরা হলেন- আ. রউফ (৫৫) বি বাড়িয়া, মজিবুর রহমান (৫৮) ময়মনসিংহ, আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮) টঙ্গী, আরিফ (৩৪) গোপালগঞ্জ, ফয়সাল (২৮) সাভার, তরিকুল (৪২) নরসিংদী, সাহেদ (৪৪) চট্রগ্রাম, উকিল মিয়া (৫৮) নরসিংদী, পান্ত ( ৫৫) টঙ্গী, খোরশেদ আলম (৫০), বেলাল (৩৪) কেরানীগঞ্জ, আনোয়ার (৫০) নারায়ণগঞ্জ, আবু বক্কর (৫৯) নারায়ণগঞ্জ, আরিফুল ইসলাম (৫০), আনোয়ার (২৬) সাভার, আনোয়ার (৭৬) নোয়াখালী সদর, ফোরকান আহমেদ (৩৫), সাতক্ষিরা, আ.রউফ (৫৫) বি বাড়িয়া, মজিবুর রহমান (৫৮) ময়মনসিংহ, আ. হান্নান (৬০) গাজীপুর, জহুরুল ইসলাম (৩৮) টঙ্গী, সাহেদ (৪৪) চট্রগ্রাম। অন্যদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, রাত ৩টার দিকে সাদপন্থিরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রীজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় ময়দানের ভেতর থেকে যোবায়েরপন্থিরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে সাদপন্থিরাও পালটা হামলা চালায়। একপর্যায়ে সাদপন্থিরা ময়দানে প্রবেশ করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ৩ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সাদপন্থিদের প্রভাবশালী মুরুব্বী মুয়াজ বিন নূর এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ইজতেমা ময়দান আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জুবায়েরপন্থিদের আক্রমণে আমাদের এক ভাই শহিদ হয়েছেন। ময়দানে অনেক জুবায়েরপন্থি চাকু ও ছোঁড়াসহ আটক হয়েছেন।
এদিকে ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষের ফলে হতাহতদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত হাফিজুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত একজন নিহত ও অসংখ্য আহত ব্যক্তিদের আনা হয়েছে।
টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক আশরাফুল ইসলাম জানান, ঢাকায় নেওয়ার পথে বেলাল নামে একজন মারা গেছেন। তার বাড়ি ঢাকার বেড়াইদ।
তৃতীয় ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত করেন সাদপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হতাহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান জানান, ইজতেমা ময়দানে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
মন্তব্য করুন


চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সারের কোনো ঘাটতি হবে না বলে জানান স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের কাছে এখন কেউ সারের টাকা পাবে না। অন্তর্বর্তী সরকার এসে সব দেনা শোধ করেছে। নভেম্বর পর্যন্ত যে মজুদ, তাতে কোনো ঘাটতি হবে না।
সোমবার (২১ জুলাই) সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, সারের লাইসেন্স নিয়ে যারা ঝামেলা করেছে, সেগুলো বাদ দিয়ে নীতিমালা মেনে নতুন লাইসেন্স দেওয়া হবে। সারের নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রকৃত ডিলাররাই যেন সারের ডিলারশিপ পায়, সেটা নিশ্চিত করা হবে।
সারা দেশে ১০০ মিনি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী মৌসুমের আগেই হয়তো এগুলো চালু হবে। আগে যন্ত্রপাতি কেনার সময় দুর্নীতি হতো। সব কাগজপত্র দুদকে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কৃষক যেন আলুর দাম পান, সেজন্য ওএমএসের মাধ্যমে আলু দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
তবে এবার পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়নি।
মন্তব্য করুন


আগামী বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে পারবো কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শনিবার (৫ এপ্রিল) সকাল ৭টা ৭ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না আগামী বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে পারব কিনা, আমাদের চাপ সৃষ্টি করে যেতে হবে যাতে তারা স্বেচ্ছায়, পূর্ণ মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়।
তিনি জানান, বার্মিজ সামরিক জান্তাকে খুশি করার জন্য তথাকথিত ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’র ঘনিষ্ঠ চাটুকার ও কিছু কূটনীতিক রোহিঙ্গাদের জন্য এক নতুন নাম তৈরি করেছিলেন- FDMN, অর্থাৎ 'জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক'। এই শব্দটি আসলে বার্মিজ গণহত্যার মূল আখ্যানকে মেনে নেয়ার একটি কৌশল, যেখানে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বই অস্বীকার করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রোহিঙ্গারা কোনো 'FDMN' নয়- তারা শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাস, শিল্প ও সংস্কৃতির ধারক একটি জাতি। 'FDMN' শব্দটি ব্যবহার করে তাদের প্রকৃত পরিচয়, সম্মান ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
প্রেস সচিব আরও বলেন, চীনের কুনমিং শহরে এবং ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক (BIMSTEC) শীর্ষ সম্মেলনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সঙ্গে আলোচনা করে, তখন তারা দীর্ঘদিন ধরে নিপীড়নের শিকার জনগোষ্ঠীকে তাদের প্রকৃত পরিচয়ে পরিচিত করে ‘রোহিঙ্গা’ হিসেবে। জান্তার কর্মকর্তারাও শেষমেশ এই পরিচয় স্বীকার করতে বাধ্য হন। আমাদের সঙ্গে বৈঠকে তারাও ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করেন। (আমি নিজে ওই দুটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম)
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না যে আগামী বছরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠাতে পারব কিনা। বিশেষ করে রাখাইনে আরাকান আর্মির (এএ) দখল প্রক্রিয়ার ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। তবে গত কয়েকদিনে যেটা দেখেছি, তা আমাদের নেতৃত্ব এবং শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকদের এক সাহসী ও দৃঢ় অবস্থান। মিয়ানমার জান্তা কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছে। এখন দরকার টানা কূটনৈতিক চাপ বজায় রাখা, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, পূর্ণ মর্যাদা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তার সঙ্গে ফিরিয়ে নেয়।
মন্তব্য করুন